আজ রবিবার, ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জেলা জুড়ে নকল গ্যাসের ছড়াছড়ি যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্বক দুর্ঘটনা

# নকল গ্যাস সিলিন্ডারের ছড়াছড়ি বাজারে : আমদানিকারী ব্যবসায়ী
# আন্দোলন না হলে ঘুম ভাঙ্গে না : নাগরিক কমিটি
বিল্লাল আহমেদঃ
সময় বাচাঁতে জীবনের ঝুঁিক। আসল নাকি নকল চেনাটা অনেকটাই অস্বভাবিক। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের লোভে অবৈধ ও নকল গ্যাস সিলিন্ডারের ছড়াছড়িতে বাজার ছাপিয়ে রেখেছে প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ীরা। মেয়াদ শেষ হওয়া অথবা নকল সিলিন্ডার সঙ্গে রাখা মানে নিজের সাথে বোমা রাখা।

একের পর এক বিস্ফরনের ঘটনা সংগঠিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সকলের চোখের সামনে এ সকল ঘটনা ঘটছে। তার পরও কি কোন ব্যবসায়ী সঠিক ভাবে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছে? অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা বন্ধ হচ্ছে? নকল গ্যাস সিলিন্ডার প্রস্তুত বন্ধ রাখা যাচ্ছে? এ সকল নকল গ্যাস সিলিন্ডার প্রস্তুতকারীরা মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়ে ব্যবসা করে। কিন্তু দায়িত্বে থাকা বিস্ফোরন অধিদপ্তর কি করছে? এসকল প্রশ্ন আসল-নকল গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের।

নকল গ্যাস সিলিন্ডার প্রস্তুতকারীদের ধিক্কার দিয়ে তাঁরা জানায় বিস্ফোরন ঘটলে সপ্ন শেষ। চোখের সামনে কিনে আনা মৃত্যুকে অবহেলা করে মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করছি কে করবে এদের সচেতন? কোন একটি ঘটনা সংগঠিত হয়ে যাওয়ার পর বুক ফাঁটা কান্নার আহাজারিতে নিশ্চুপ পরিবেশকে স্বাভাবিক করতে দেখা যায় দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। খোঁজা হয় অপরাধীকে চলে অভিযান দিনরাত একাকার করে দায়িত্ব পালনের প্রতিযোগিতা।

কিন্তু এতে করে কি সংগঠিত হয়ে যাওয়া ঘটনার পূর্বের অবস্থা কখনো ফিরে আসে না। ফিরে আসে প্রিয়জন? ফিরে আসে চোখ থেকে ঝড়ে পড়া অশ্রু? কিন্তু ফিরে আসে একের পর এক এ সকল অসাধু অবৈধ নকল সিলিন্ডার গ্যাস প্রস্তুতকারীরা। এদের কাছ থেকে বাঁচতে হলে যানতে হবে সকল পণ্যের মত সিলিন্ডারেরও মেয়াদ শেষ বা প্রস্তুতের মেয়াদ থাকে। কিভাবে জানা যাবে সিলিন্ডারের মেয়াদ? অ, ই, ঈ, উ সংকেত দিয়ে বুঝানো হয়েছে ৩ মাস করে ১ বছরকে।

গতকাল নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পশ্চিম সস্তাপুর এলাকায় গ্যাসের লাইজার লিকেজ করে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ২ঘন্টা যাবৎ জ্বলতে থাকা অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বর্তমানে আতঙ্কিত ওই এলাকাবাসী। ফায়ার সার্ভিসের যৌথ প্রচেষ্টায় সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা যায়। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) শেষ রাত ৩টার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যেক্ষদর্শী ইসমাইল মোল্লা জানান, হালকা বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ একটা বিকট শব্দের আওয়াজ শুনতে পাই। তখন আনুমানিক রাত ৩টা বাজে। আমরা বাসা থেকে বের হয়ে দেখি ভয়াবহ আগুন ক্রমসই উপরের দিকে উঠছে। প্রথমে হালকা আগুন দেখে আমরা পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করি। পরে আগুন আরও বেশী বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে বৈদ্যুতিক লাইন পর্যন্ত আগুন উঠে যায়।

দেশের সব জায়গায় বিশ্লেষণের পরে দেখা যায় বেশিরভাগ জায়গার আগুনের সূত্রপাত গ্যাসের কারনে হয়। তাই জনসাধারণকে গ্যাসের ব্যবহার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এবং প্রত্যেকদিন গ্যাসের লাইজার কিংবা গ্যাসের পাইপ কোন জায়গায় লিক আছে কিনা সে বিষয়গুলো নিজ দায়িত্বে ভালো ভাবে যাচাই করতে হবে। আর তাহলেই অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলো আস্তে আস্তে কমে আসবে

গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পনীর একজন ডিলারের সাথে কথা হলে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বড় ঘাঁিট নকল গ্যাস সিলিন্ডারের। সিলিন্ডারের ১২ কেজি গ্যাসকে নকল করে ৩৬ কেজি তৈরি করে । নকল গ্যাস প্রস্তুত করে পানি ও নষ্ট তৈলের গাদ রেখে পাইপের মাধ্যমে হাওয়া দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া নামি-দামি কোম্পানীর গ্যাস সিলিন্ডারের অবিকল নকল করে বোতলের ক্যাপ থেকে শুরু করে সব কিছু সরবরাহ সহ মজুত করে রাখে অবৈধ নকল গ্যাস সিলিন্ডার প্রস্তুতকারীরা। এসকল নকল গ্যাস বিভিন্ন এলাকায় রিফিল করা হয়। যেই বোতলের মেয়াদ নেই সেই বোতল গুলোকে সরবরাহ করে মার্কেটের বিভিন্ন দোকান থেকে এবং বিভিন্ন কোম্পানীর গ্যাস সিলিন্ডার নকল করে তৈরি করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার । এ সকল নকল গ্যাস সিলিন্ডার প্রস্তুত করে অন্যতম নকল গ্যাস ব্যবসায়ী (ময়ূরীর বাপ) তিনি রূপায়নে ফ্লাটে থাকেন। এছাড়া ভুঁইগড় এলাকায় আছে ফয়সাল। সারুলিয়া, ডেমরা এলাকার সিকদার এন্টার প্রাইজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কিন্তু নকল গ্যাস সিলিন্ডার প্রস্তুতের মূল কোম্পানী ও কারখানা দাউদকান্দি এলাকায়। সকলেই জানে পঞ্চবটিতে আজাদের দোকানে প্রকাশ্যে মানুষের সামনে নকল গ্যাস তৈরি করা হত।

নারায়ণগঞ্জের ডিস্টবিউটরদের লাইসেন্স নেই। এছাড়া বন্দর এলাকার কোন গ্যাস ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই। সাধারণ মানুষ এসে বলছে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কম কিন্তু আপনারা বেশি নিচ্ছেন কেন?

অপরদিকে কালির বাজার এলাকার স্থানীয় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী জজ মিয়া বলেন, আমার দোকানে ৪ বছর যাবত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করি। প্রতিদিন ১২ টার অধিক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হয়। বিভিন্ন কোম্পানী ও ডিস্টবিউটররা চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে গ্যাস সিলিন্ডার আনে এবং আমাদের কাছে পাঠায়। এছাড়া যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ আর্মি মার্কেট থেকে কিনে আনি এবং এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।

কালিরবাজার এলাকার স্থানীয় আরেক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী হাসেম বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে গ্যাস সিলিন্ডার আমদানি করে থাকি। তবে এগুলো নকল নাকি আসল সেই সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারনা নেই। যে খানে কম মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার পাই, সেইখান থেকেই সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি।

এছাড়া শাহিন বিরিয়ানী এন্ড ফাস্ট ফুডের ম্যানেজার বলেন, প্রতি মাসে ৩০টির অধিক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয় আমাদের রেস্তোরায়। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের কাছে ফোন করলে তারা গ্যাস সিলিন্ডার দোকানে পৌঁছে দেয় । টাকা দেই গ্যাস নেই। কিভাবে আসে তা যানি না!
আরেক হোটেল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, দোকানে গ্যাস দিয়ে যায় কিন্তু একেক সময় একেক রকম ভাবে গ্যাস ব্যবহার হয়। মাঝে মধ্যে আসল গ্যাস দেয় আবার মাঝে মাঝে নকল গ্যাস দিয়ে যায় গ্যাস ব্যবসায়ীরা। প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে নকল গ্যাস ব্যবহার বন্ধ হবে।

এছাড়া রেস্তোরা ম্যানেজার জাহিদ বলেন, আমরা মাসে ১০ টা করে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে আনি এবং খাদ্য পুস্তুতে ব্যবহার করে থাকে। চেষ্টা করি কোন দূর্ঘনা যাতে না হয় কিন্তু দুর্ঘটনাতো বলে আসে না।

সুপার ষ্টার রেস্তোরার ম্যানেজার বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার মাসে ১০টা ব্যবহার করি। কি ভাবে ব্যবহার করবো এটাতো কেউ বলে না, তারপরও আমারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চলি।

অন্যদিকে, আজাহার সিকদার হোটেলের ম্যানেজার জানায়, স্থানীয় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী গ্যাস বিক্রি করে কিন্তু তাঁদের লাইসেন্স আছে কিনা আমরা জানি না । তবে যদি লাইসেন্স না থাকে তাহলে কি করে গ্যাস বিক্রি করে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট নাগরিকরা নকল জেলা জুড়ে নকল গ্যাস সরবরাহে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্বক দুর্ঘটনা। নগরবাসী এ মৃত্যু ঝুকি থেকে মুক্তি চায়। তারা প্রশাসনের সহযোগিতা চায়।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের ঝুঁকি অনেক। এছাড়া ভাল আর খারাপ সিলিন্ডার বুঝার উপায় নেই। ঘটনা ঘটছে মানুষ মরছে কিন্তু আন্দোলন না হলে কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙ্গে না!
নিরাপত্তার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরিফিন জানায়, সিলিন্ডার গুলোতে অনেক ঝুঁকি আছে। এগুলোর মেয়াদ আছে কিনা তা পরিক্ষা নিতে হয় । আর ৩’শ পেশার এর অধিক হলে বিস্ফরন ঘটতে পারে।

এ বিষয়ে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরির্দশক অধিদপ্তরের উপ-মহাপরির্দশক মো: মাহফুজুর রহমান দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানান, আসলে গ্যাস প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে সিলিন্ডারে রূপান্তরিত করা হয় এবং এলজিটি দেখে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক কর্মকর্তা শামসুল আলম দৈনিক সংবাদচর্চাকে জানান, গ্যাস নকল হচ্ছে এটা ঠিক নয়। তবে গ্যাস সিলিন্ডারে চুড়ি হচ্ছে বড় গ্যাস সিলিন্ডারকে ছোট আকারে ভাগ করতে গিয়ে। এছাড়া মুনাফার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা এ সকল কর্মকান্ড করে থাকে। এদের বিরূদ্ধে আমরা খবর পেলে আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি।